উদ্রিক্ত বেদনার হুতাশ ও নাস্তিকতা
'পুরোনো মানুষের মধ্যে আমরা এতদিনের জানাশোনা সেই পুরোনো মানুষটাকেই দেখতে চাই আবার ' - বর্ষীয়ান কবি নরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের ' ঈশ্বর এবং মানুষ ' কাব্যগ্রন্থটি পড়ে কবি শঙ্খ ঘোষের এই কথাগুলি মনে এল।এই কাব্যগ্রন্থটির আগে তাঁর আরও বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।সেখানেও নরেন্দ্রনাথ আবহমান মানুষের ও মনুষ্যত্বের কথা বলেছেন বলেই বক্ষ্যমাণ গ্রন্থেও সেই পুরোনো ফর্মের মানুষ ও মানুষতাকে কবি গতানুগতিক বিন্যাসে পরিবেশন করেছেন, এমনটি নয়। আবহমান মানুষের ও মানুষতার ভেতরেও যে নবতর মানবতার উদ্বোধন,যা কবির অণ্বিষ্ট,তারই শিল্পিত অভিব্যক্তি 'ঈশ্বর এবং মানুষ'। তথাকথিত ঈশ্বর বিশ্বাসকে সচেতনভাবেই তাঁর বোধ ও অন্তরলোক থেকে দূরে সরিয়ে রেখে এবং মানুষকে মৃত ঈশ্বরের প্রতিস্পর্ধীর আসনে বসিয়ে নরেন্দ্রনাথ' সবার উপরে মানুষ সত্য 'এই মেসেজ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তাঁর এই অবিশ্বাস শৌখিন মজদুরি নয়। বরং হৃদয়সঞ্জাত অনুভব।মোট চল্লিশটি কবিতা নিয়ে গড়ে ওঠা এই কাব্যগ্রন্থে কবি পেলব শব্দবন্ধে কবিতার মদিরতার বদলে শানিত তীরের ফলার মতো শব্দ ব্যবহার করে বহুযুগ লালিত আস্তিকতাকে বিদ্ধ করেছেন। মানুষের লাঞ্ছনায় তাঁর চিত্ত দেশে যে বেদনা উদ্রিক্ত হয় সেই বেদনার অভিঘাতে গড়ে ওঠে তাঁর কবিতার অবয়ব। সেই অবয়ব ঋজু, সংহত,অথচ কঠিন ও তীক্ষ্ণ। মানুষ যদি ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়, তবে কেন মানুষে মানুষে হানাহানি? এই প্রশ্ন নরেন্দ্রনাথকে বিব্রত করে।আর সেই বিব্রত বোধ থেকে বেরিয়ে আসে ' ঈশ্বর ও মানুষ ' ' পায়ের তলায় সভ্যতার আবর্জনা ' ' ভৌতিক ঈশ্বর ' ইত্যাকার কবিতাগুলি। কবি নরেন্দ্রনাথ মরমী।তাই তিনি লেখেন -
১। ঈশ্বর যিনি জীবনের লাগাম/ধরে রেখেছিলেন/তিনি নেই। (ঈশ্বর ও আমি)
২। জেগে আছে, জেগে থাকে ভৌতিক ঈশ্বর। (ভৌতিক ঈশ্বর)
৩। পড়ে আছে দেবতাদের ক্ষত বিক্ষত লাশ/পূজারি ব্রাহ্মণ সহায় সম্বল হীন হাঘরে ভিক্ষুক। (উত্তরাখণ্ড) ইত্যাদি।
বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন সৌম্যদীপ দাশ।বিষয়ভাবনার সঙ্গে বেশ সম্পৃক্ত। ছাপা ও বাঁধাই বেশ ভালো। কাগজ আরও একটু ভালো হলে ভালো হতো। সব মিলিয়ে হাতে তুলে নেওয়ার মতো বই।
ঈশ্বর এবং মানুষ
নরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত
প্রকাশক- শামুক
দাম- ষাট টাকা।
Comments